আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, বৈদিক ধর্মের মূল মন্ত্রগুলো আমাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে? বৈদিক দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। অন্যায়কে অবহেলা করা বা তার সঙ্গে আপস করা শুধু আমাদের নিজের আত্মাকে দূষিত করে না, এটি সমাজকেও নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয়।
বৈদিক ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি
বৈদিক শাস্ত্রের মর্মকথা হল ধর্মপালন, যা সত্য এবং ন্যায়ের পথে চলতে শেখায়। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে:
“अहंस्त्मा येषां परो मित्रा मित्रस्य चोदनम्।”
(অর্থ: সত্যকে আঁকড়ে ধরা উচিত, কারণ সত্যই পরম ধর্ম।)
আপনি যদি সত্যের পথে থাকেন, তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আপনার ধর্ম। আমরা যখন অন্যায়ের মুখোমুখি হই, তখন এক মুহূর্তের জন্য থেমে যাই এবং ভাবি, “আমি কী করব?” বৈদিক ধর্ম আমাদের স্পষ্ট দিশা দেয়—ন্যায় এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়ান।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা
আমি একবার এমন একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম যেখানে আমার এক সহকর্মী অন্য একজনের কাজের কৃতিত্ব নিচ্ছিল। আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিলাম, কারণ এতে আমার নিজের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমার মনে পড়ল ঋগ্বেদের আরেকটি শ্লোক:
“मा चन्द्रां जाह्यमानास्मृतिम्।”
(অর্থ: অন্যায় কাজ দেখে নিশ্চুপ থাকা নিজেও অন্যায়ের শরিক হওয়া।)
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, সত্যের পক্ষে কথা বলব। ফলস্বরূপ, সহকর্মীটির সত্য সামনে এলো এবং অফিসে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হলো।
উদাহরণস্বরূপ মহাভারতের শিক্ষা
মহাভারতের একটি বিখ্যাত ঘটনা মনে করুন, যেখানে ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য, এবং কৃপাচার্যরা অন্যায় দেখেও চুপ ছিলেন। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় তারা সক্রিয়ভাবে কিছু করেননি, কারণ তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এর পরিণতি ভয়াবহ ছিল—কৌরব বংশের পতন। এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয় যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়ানো মানে সেই অন্যায়ের অংশীদার হওয়া।
বৈদিক নীতির উদাহরণ
বৈদিক শাস্ত্র শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সামাজিক জীবনে ন্যায়ের গুরুত্বও বোঝায়। ঋগ্বেদে উল্লেখ আছে:
“एकम् नित्यं समान्नं।”
(অর্থ: সমস্ত সমাজ একটি সুতোয় বাঁধা, তাই অন্যায় কোনো একটি অংশকে আঘাত করলে পুরো সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।)
ধরুন, আপনি একটি রাস্তায় হাঁটছেন এবং দেখলেন কেউ একটি গাছ কাটছে যার জন্য পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আপনি যদি কিছু না বলেন, তাহলে এর প্রভাব শুধু গাছটির ওপর নয়, পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরও পড়বে। বৈদিক শিক্ষা অনুযায়ী, আপনার উচিত হবে সেই কাজের প্রতিবাদ করা এবং পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখা।
আধুনিক সমাজে প্রাসঙ্গিকতা
আজকের দিনে আমরা প্রায়শই দুর্নীতি, অনৈতিক কাজ বা সামাজিক অন্যায়ের সাক্ষী হই। বৈদিক ধর্ম বলে, আপনি যদি ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ান, তবে আপনিই এক দিন পরিবর্তনের কারণ হয়ে উঠবেন। যেমন ঋগ্বেদে বলা হয়েছে:
“स्वग्र्न् यो स्युज्येत।”
(অর্থ: সমাজের প্রকৃত বীর হলেন তিনি, যিনি ন্যায়ের জন্য লড়াই করেন।)
যখন আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন, তখন আপনার সাহস অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।
কীভাবে এই নীতিগুলো জীবনে প্রয়োগ করবেন
- সত্যের পথে চলুন: সত্যের প্রতি অটল থাকুন, এমনকি এটি কঠিন হলেও। সত্য আপনাকে আত্মবিশ্বাস এবং শক্তি জোগাবে।
- অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলুন: অন্যায় দেখলে সাহস করে প্রতিবাদ করুন। এটা ছোট কিছু হতে পারে, যেমন স্কুলে বন্ধুর প্রতি অন্যায় আচরণ, বা বড় কিছু, যেমন সামাজিক অবিচার।
- বৈদিক শিক্ষা পড়ুন এবং চর্চা করুন: বৈদিক শ্লোক ও তাদের অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন। এগুলি আপনার নৈতিকতার ভিত্তি মজবুত করবে।
শেষ কথা
বৈদিক ধর্ম আমাদের শেখায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শুধু একটি কাজ নয়, এটি আমাদের ধর্ম এবং দায়িত্ব। আপনি যদি বৈদিক শিক্ষার পথ ধরে এগোন, তাহলে কেবল নিজের নয়, সারা সমাজের উন্নতি হবে।
এখন আপনার কাছে প্রশ্ন: আপনি কি আজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত? ঋগ্বেদের এই শ্লোকটি মনে রাখুন:
“सत्यमेव जयतेन्द्रम्।”
(অর্থ: সত্য সবসময় বিজয়ী হয়।)