প্রাণীজগৎ এবং প্রকৃতি—এরা আমাদের জীবনধারণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বৈদিক ধর্মে এদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সুরক্ষা এক বিশেষ স্থান অধিকার করে। আপনি যদি বৈদিক জীবনের নীতিগুলি অনুসরণ করেন, তাহলে প্রাণীজগতের প্রতি আপনার দায়িত্ব ও ভালোবাসা আরও গভীর হতে পারে। আমি আপনাকে বৈদিক ধর্মের এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চাই এবং কিছু অনুপ্রেরণাদায়ক উদাহরণ ও মন্ত্র শেয়ার করব।
প্রাণীজগত এবং বৈদিক দর্শন
বৈদিক ধর্ম প্রকৃতির সাথে মানবজীবনের সুসম্বন্ধকে গুরুত্ব দেয়। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে:
“মাতাভূমিঃ পুত্রোহং পৃথিব্যাঃ।”
(ঋগ্বেদ ১২.১.১২)
“পৃথিবী আমাদের মা, আর আমরা তার সন্তান।”
আপনি যদি এই চিন্তাধারা হৃদয়ঙ্গম করেন, তাহলে প্রাণীজগতকেও সেই মায়ের সন্তান বলে গণ্য করবেন। বৈদিক ধর্মে প্রতিটি প্রাণীকে জীবের একটি রূপ এবং ব্রহ্মাণ্ডের একটি অংশ বলে মনে করা হয়।
প্রাণীজগতের প্রতি দায়িত্ব এবং উদাহরণ
১. গরুর প্রতি শ্রদ্ধা
বৈদিক ধর্মে গরুকে পবিত্র বলে মানা হয়। গরুকে মাতা রূপে পূজা করার রীতি বৈদিক গ্রন্থে উল্লেখিত। “গোমাতা” শব্দটি কেবল একটি ধর্মীয় প্রতীক নয়, এটি প্রকৃতির সাথে মানুষের গভীর সম্পর্কের প্রতীক। “অথর্ববেদ” বলে:
“ধেনুঃ সদনম রায়ে।”
“গরু হলো সমৃদ্ধির উৎস।”
আপনার জীবনে গরু বা অন্যান্য প্রাণীর প্রতি যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আপনি প্রকৃতির প্রতি আপনার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
২. পাখি এবং পশুর প্রতি দয়া
বৈদিক ধর্মে পাখি এবং বন্য প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। “মহাভারত”-এ বলা হয়েছে:
“অহিংসা পরমো ধর্মঃ।”
“অহিংসা সর্বোচ্চ ধর্ম।”
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, একটি সাধারণ পাখিকে খাদ্য দেওয়া বা তৃষ্ণার্ত প্রাণীকে জল দেওয়া কতটা বড় কাজ হতে পারে? বৈদিক জীবনধারা এই ছোট ছোট কাজগুলিকেও পুণ্যের অংশ বলে গণ্য করে।
৩. অরণ্যের গুরুত্ব এবং প্রাণীজগতের সুরক্ষা
বৈদিক গ্রন্থে বনকে দেবতা বলে পূজা করা হয়েছে। বনের প্রাণী এবং বৃক্ষকে রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। “যজুর্বেদ”-এ উল্লেখ রয়েছে:
“বৃক্ষান্ন ন হিংস্যাত।”
“গাছেদের ক্ষতি করো না।”
আপনি যদি গাছ লাগান এবং বনের প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন, তাহলে তা বৈদিক ধর্মের মূল ভাবনাকেই এগিয়ে নিয়ে যাবে।
উদাহরণস্বরূপ জীবনের পরিবর্তন
আমি আমার নিজের জীবনে দেখেছি, প্রাণীজগতের প্রতি দায়িত্ব পালন করলে জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। আপনি যখন একটি প্রাণীকে সাহায্য করবেন, তখন সেই প্রাণীর চোখে যে কৃতজ্ঞতার প্রকাশ দেখবেন, তা আপনাকে এক অদ্ভুত আনন্দ দেবে।
আমি একবার একটি আহত কুকুরকে সেবা করেছিলাম। সেই মুহূর্তে আমি বৈদিক ধর্মের “পরোপকার”-এর আসল অর্থ অনুভব করেছিলাম। আপনি যদি নিজের জীবনে এমন ছোট ছোট কাজ করেন, তাহলে আপনি বৈদিক ধর্মের সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত হতে পারবেন।
ভাবনার শেষ কথা
বৈদিক ধর্ম আমাদের শিক্ষা দেয় যে প্রকৃতি এবং প্রাণীজগতকে ভালোবাসা এবং সুরক্ষা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। আপনারা কি কখনো ভেবেছেন, আমরা যদি প্রতিটি প্রাণীকে আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য করি, তাহলে পৃথিবী কতটা সুন্দর হতে পারে?